হ্যান্ডরিটেন প্রেসক্রিপশন: রোগীদের জন্য একটি নীরব দুর্ভোগ

blog details

23 Jul 2025

0

473

হ্যান্ডরিটেন প্রেসক্রিপশন: রোগীদের জন্য একটি নীরব দুর্ভোগ

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো অধিকাংশ প্রেসক্রিপশন লেখা হয় কাগজ ও কলমে। যদিও এটি বহু বছর ধরে প্রচলিত একটি পদ্ধতি, কিন্তু এর ফলে রোগীরা প্রতিদিন নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন—যার অনেকটাই অদৃশ্য এবং নীরবে ঘটে চলেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—হাতের লেখার অস্পষ্টতা। অনেক ডাক্তার দ্রুত ও অজস্র রোগী দেখার চাপে প্রেসক্রিপশন লেখেন তাড়াহুড়ো করে, ফলে সেটি পড়া বেশিরভাগ সময়েই সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি অনেক ফার্মাসিস্টও ঠিকমতো বুঝতে পারেন না ডাক্তার আসলে কোন ওষুধ লিখেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে অন্তত ১ জন ভুল ওষুধ সেবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান, যার একটি বড় কারণ অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Institute of Medicine এর একটি গবেষণায় জানা যায়, শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশনের ভুল পড়ার কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭০,০০০ এর বেশি ভুল চিকিৎসার ঘটনা ঘটে। যদিও বাংলাদেশের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, তবে দেশীয় পর্যায়ে ফার্মাসিস্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা প্রতিদিন অসংখ্য ভুল ওষুধ সরবরাহের অভিজ্ঞতার কথা জানান যা সরাসরি হাতের লেখার অস্পষ্টতার ফল।

রোগীদের অসুবিধা এখানেই থেমে থাকে না। অনেক সময় ডোজ নির্দেশনা বা ব্যবহারের সময় (যেমন সকালে, রাতে, খাওয়ার আগে-পরে ইত্যাদি) স্পষ্ট না থাকায় রোগীরা ভুলভাবে ওষুধ সেবন করেন, যা শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা তৈরি করে। এ ছাড়া কোনো কারণে প্রেসক্রিপশন হারিয়ে গেলে রোগীকে পুনরায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়, যা সময়, অর্থ এবং মানসিক চাপ তৈরি করে।

বিশেষ করে বয়স্ক, কমশিক্ষিত বা গ্রামাঞ্চলের রোগীরা এই সমস্যার শিকার হন বেশি। একজন ৬৫ বছর বয়সী ডায়াবেটিস রোগী হয়তো ঠিকমতো বুঝতেই পারছেন না কোন ওষুধ সকাল বেলা খেতে হবে, কোনটি রাতে—ফলে হয়তো তিনি ডোজ ও সময় উল্টে ফেলছেন প্রতিদিনই।

এই ধরনের সমস্যা শুধু রোগীর জন্যই নয়, চিকিৎসকদের জন্যও একধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি করে। কারণ চিকিৎসা একটি সেনসিটিভ পেশা, যেখানে একটি সামান্য ভুলও বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। অথচ এসব ভুলের অনেকটাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

এই প্রেক্ষাপটে প্রেসক্রিপশন সফটওয়্যার যেমন ProtonEMR একটি যুগোপযোগী সমাধান হতে পারে। যখন ডাক্তার একটি সফটওয়্যারে প্রেসক্রিপশন তৈরি করেন, তা হয় পরিষ্কার, প্রিন্টযোগ্য এবং রোগী কিংবা ফার্মাসিস্টের বোঝার উপযোগী। ডোজ, ওষুধের নাম, খাওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ—সবকিছু সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। এমনকি ডিজিটাল কপি থাকায় রোগী হারিয়ে ফেললেও সহজেই আবার পেতে পারেন তার প্রেসক্রিপশন।

অতএব, একটি কার্যকর, নিরাপদ এবং আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন থেকে বেরিয়ে এসে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনের পথে যাত্রা করা সময়ের দাবি। শুধু রোগীর স্বার্থে নয়, বরং পুরো স্বাস্থ্যখাতের মান উন্নয়নের জন্য প্রেসক্রিপশন ডিজিটালাইজেশন এখন অপরিহার্য।